SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ভাষার মৌলিক রীতি কোনটি?

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার মনের মধ্যে সব সময়ই নানা বুদ্ধি বা ভাবের আনাগোনা চলে। সেই বুদ্ধি বা ভাব ইশারায়, নানা অঙ্গভঙ্গি করে, ছবি ও নাচের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। কিন্তু মুখের ধ্বনির সাহায্যে ব্যাপক পরিসরে তা প্রকাশ করা যায়। যেভাবেই মনের ভাব প্রকাশ করা হোক না কেন, এর সবই ভাষা। তবে অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় মানুষের মুখের ধ্বনি অনেক বেশি অর্থপূর্ণ হয় ও অন্যে বুঝতে পারে। সুতরাং সাধারণ কথায় ‘ভাষা' বলতে বোঝায়, মানুষের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অর্থপূর্ণ কতকগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টি। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ।

ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন: “মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ্‌-যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনও বিশেষ জন-সমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

অর্থাৎ, নির্দিষ্ট জনসমাজের মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখ দিয়ে অন্যের বোধগম্য অর্থপূর্ণ যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে তাকে ভাষা বলে৷
স্থান, কাল ও সমাজভেদে ভাষার রূপভেদ দেখা যায়।

ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে। মানুষের গলনালি, দাঁত, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, নাক ইত্যাদির সহযোগ হলো বাগ্যন্ত্র৷

যেকোনো ধ্বনি বা আওয়াজই ভাষা নয়। সেখানে অর্থ এবং অর্থের ধারাবাহিকতা থাকা চাই। ধ্বনির অর্থপূর্ণ মিলনে গঠিত হয় শব্দ। আর একাধিক শব্দের সমন্বয়ে অর্থের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয় বাক্য।

পশু-পাখির ডাক ও মানুষের ভাষার মধ্যে পার্থক্য এখানেই। মানুষ একের পর এক অর্থবোধক শব্দ জুড়ে বাক্য তৈরি করে। বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে একের মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করে। এই ক্ষমতা পশু-পাখির মধ্যে নেই। পশু-পাখি নানা আওয়াজ করে ঠিকই, কিন্তু তা ভাষার ধ্বনি, শব্দ ও বাক্যের মতো কোনো বিষয় বা ধারণাকে ধারাবাহিকভাবে স্পষ্ট করতে পারে না। সে জন্য পশু-পাখির ডাক ভাষা নয়।

স্থান, কাল ও সমাজভেদে ভাষার রূপভেদ হয় বলে পৃথিবীর সব দেশের সব জনগোষ্ঠীর মানুষের ভাষা এক নয়। আবার একই ভাষার এক হাজার বছর আগের রূপ আর আজকের রূপ হুবহু মেলে না। যেমন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা বাংলা, ইংল্যান্ডের মানুষের ভাষা ইংরেজি, ফ্রান্সের মানুষের ভাষা ফরাসি, চীন দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা ম্যান্ডারিন ইত্যাদি। আবার বাংলাদেশে বাংলার পাশাপাশি চাকমা জনগোষ্ঠী নিজস্ব চাংমা ভাষায়, গারো জনগোষ্ঠী তাদের আচিক ভাষায় কথা বলে। প্রায় পাঁচশো বছর আগের বাংলা ভাষা এবং আজকের বাংলা ভাষাও হুবহু এক নয়। সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে ভাষারূপের এই পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনশীলতার কারণে ভাষাকে প্রবহমান নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মনের ভাবকে প্রকাশের জন্য বিভিন্ন মানবসমাজে ভিন্ন ভিন্ন দেশে নানা রকমের শব্দ ব্যবহার করা হয় । এগুলোই একেক দেশে একেক রকম ভাষার জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্থির থাকে না। ভাষা স্থির হয়ে গেলে তা মৃতভাষায় পরিণত হয়। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি ভাষা প্রচলিত আছে।

Content added By

Related Question

View More